প্রতিনিধি 2 November 2025 , 8:24:36 প্রিন্ট সংস্করণ

মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন মুম্বাই তথা সারা ভারতে রাজত্ব করতে। আরব সাগরের পাড়ে বসে এক পড়ন্ত বিকেলে মনে মনে এমনই এক প্রতিজ্ঞা করেছিলেন শাহরুখ খান। তবে শুধু ভারত নয়, আজ সারা দুনিয়া তাঁর হাতের মুঠোয়। কলকাতা থেকে কানাডা, পাটনা থেকে প্যারিস—সারা দুনিয়ার কোনায় কোনায় ছড়িয়ে আছে তাঁর অসংখ্য অনুরাগী। তিনি বলিউডের ‘বাদশা’। এক আবেগ, ভালোবাসা, উন্মাদনার নাম হলো। তিনি তারাদেরও তারা।
২ নভেম্বর তাঁর জন্মদিন। এখন দিনটি কার্যত উৎসবের দিনে পরিণত হয়েছে। ১৯৬৫ সালে এদিনই দিল্লির এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয়েছিল শাহরুখের। বয়স হলো তাঁর ৬০। জীবনের ৬০ বছরের মধ্যে ৩০ বছরের বেশি সময় তিনি সিনেমাকে উৎসর্গ করেছেন। একসময় দিল্লি থেকে এসেছিলেন মুম্বাইতে—ব্যাগে ছিল সামান্য কাপড়, দুচোখ ভরা স্বপ্ন আর মায়ের এক ছবি। কে জানত সেই তরুণ একদিন হয়ে উঠবেন বলিউডের সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন। শাহরুখ আজ শুধু চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব নন, তিনি কারও প্রেমিক, কারও প্রেরণা, কারও গুরু, আবার কারও প্রিয় অভিনেতা।
১৯৬৫ সালে এদিনই দিল্লির এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয়েছিল শাহরুখের। বয়স হলো তাঁর ৬০। জীবনের ৬০ বছরের মধ্যে ৩০ বছরের বেশি সময় তিনি সিনেমাকে উৎসর্গ করেছেন। একসময় দিল্লি থেকে এসেছিলেন মুম্বাইতে—ব্যাগে ছিল সামান্য কাপড়, দুচোখ ভরা স্বপ্ন আর মায়ের এক ছবি। কে জানত সেই তরুণ একদিন হয়ে উঠবেন বলিউডের সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন। শাহরুখ আজ শুধু চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব নন, তিনি কারও প্রেমিক, কারও প্রেরণা, কারও গুরু, আবার কারও প্রিয় অভিনেতা।
দিল্লি ইউনিভার্সিটির হংসরাজ কলেজ থেকে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন শাহরুখ। নাটক এবং ছোট পর্দা দিয়ে অভিনয়জগতে পা রেখেছিলেন তিনি। ছোট পর্দায় ‘ফৌজি’, ‘সার্কাস’ ধারাবাহিকের সময় দিল্লির চনমনে, প্রাণবন্ত তরুণটি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর এই যাত্রাপথ দীর্ঘ এবং উজ্জ্বল হতে চলেছে। আর সত্যিই ৩০ বছর ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্মের মানুষের হৃদয়ে বাসা বেঁধে আছেন শাহরুখ। ১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ ছবির হাত ধরে শুরু হয় তাঁর স্বপ্নের যাত্রাপথ। প্রথম সিনেমাতেই ঝুলিতে পুরেছিলেন ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। ‘বাজিগর’, ডর’, ‘আনজাম’ ছবিগুলোতে অ্যান্টিহিরো রূপেও তরুণীদের হৃদয়ে প্রেমের শিহরণ জাগিয়ে ছিলেন।

১৯৯৫ সালে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবির হাত ধরে বলিউডের ইতিহাসে প্রেমের এক নতুন উপাখ্যান লিখেছিলেন শাহরুখ। ‘অ্যান্টিহিরো’ থেকে রাতারাতি তিনি হয়ে ওঠেন ‘কিং অব রোমান্স’। তবে শাহরুখ চেয়েছিলেন অ্যাকশন হিরোরূপে নিজেকে প্রমাণ করতে। সফলতা, আর অসফলতায় ভরা তাঁর এই দীর্ঘ যাত্রাপথ। তবে একসময়ে একের পর এক ব্যর্থতায় প্রায় অস্তমিত হতে বসেছিল ‘খান’ সূর্য।
অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, শাহরুখের তারকাখ্যাতি শেষ হতে চলেছে। কিন্তু ২০২৩ সালের শুরুতেই ‘পাঠান’ ছবির চূড়ান্ত সফলতা প্রমাণ করল তিনিই প্রকৃত ‘বাদশা’। একই বছরে ‘জওয়ান’, ‘ডাঙ্কি’র হাত ধরে এক নতুন ‘খান’ অধ্যায়ের শুরু হলো। শুধু তা–ই নয়, অ্যাটলি কুমারের জওয়ান তাঁর ক্যারিয়ার এক অপূর্ণতাকে পূর্ণ করল। এই ছবিতে অভিনয় করে সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার জয় করেছিলেন শাহরুখ খান। ‘পাঠান’ ও ‘জওয়ান’ ছবিতে অ্যাকশন করে তিনি প্রমাণ করলেন, রোমান্সের পাশাপাশি অ্যাকশনেও সিদ্ধহস্ত।
শাহরুখের উত্থানের কাহিনিজুড়ে আছে তাঁর পরিবার। স্ত্রী গৌরী খান, যিনি তাঁর জীবনের মতোই তাঁর নান্দনিকতার সঙ্গী। আরিয়ান, সুহানা আর আব্রাম—তিন সন্তান ঘিরে শাহরুখের দুনিয়া। শাহরুখ প্রায়ই বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় অর্জন আমার পরিবার।’ কাজের অবসরে নিজের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসেন কিং খান। এক সাক্ষাৎকারে শাহরুখ বলেছিলেন যে নিজের সন্তানদের রক্ষা করতে তিনি চলন্ত গাড়ির সামনেও ঝাঁপিয়ে পড়তে একটুও ভাবেন না।
বলিউডের সবচেয়ে ধনীর তারকার নামও শাহরুখ। সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনা থেকে বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেলিং—নানা মাধ্যম থেকে অর্থ কামিয়েছেন তিনি। সেই সুবাদে প্রথমবারের মতো বিলিয়নিয়ার ক্লাবের সদস্য হলেন শাহরুখ খান। সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২৫ সালের হুরুন ইন্ডিয়া রিচ লিস্টে প্রথম স্থানে জায়গা পেয়েছেন তিনি। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১২ হাজার ৪৯০ কোটি রুপি।
শাহরুখের সাফল্য সংখ্যায় নয়, গল্পে। এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের গল্প, যিনি ভালোবাসা, অধ্যবসায়, আবেগ আর বিনয়ের জোরে জিতে নিয়েছেন সমগ্র বিশ্বকে। সারা দুনিয়ায় অনেক ঠিকানা থাকলেও মুম্বাই তাঁর প্রিয় ঠিকানা। আরব সাগরের তীরে তাঁর ঠিকানা ‘মান্নাত’ এখন মুম্বাইয়ের অন্যতম দ্রষ্টব্যস্থান হয়ে উঠেছে। তাঁকে ক্ষণিক দেখার অপেক্ষায় আজ হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে থাকবেন মান্নাতের সামনে।