
প্রতিনিধি 22 November 2025 , 12:14:26 প্রিন্ট সংস্করণ

আজ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) আহতদের ঢল নামে। এই ভূমিকম্পে বড় কোনো ভবন ধস বা দেয়ালচাপার ঘটনা না ঘটলেও, তীব্র আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে এবং মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন।
ভূমিকম্প যতটা না ভবন ধ্বংস করেছে, তার চেয়ে মানুষের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ফলে জীবন বাঁচাতে নিরাপদ স্থানে দ্রুত ছুটতে গিয়েই বেশি ভাগ মানুষ আহত হয়েছেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। সকালে শক্তিশালী ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি থেমে গেলেও এর ফলে সৃষ্ট আতঙ্ক এবং ছোটাছুটির জের দেখা যায় রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (পঙ্গু হাসপাতাল) করিডরগুলোতে। সরেজমিনে দেখা যায়, কারও হাতে ব্যান্ডেজ, কারও পায়ে প্লাস্টার, আবার কেউ তীব্র ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে হাসপাতালে পৌঁছেছেন।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (পঙ্গু হাসপাতাল) থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, শুক্রবার রাত ১০টা পর্যন্ত মোট ১২০ জন আহত ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ১৯ জনকে ভর্তি করতে হয়েছে এবং গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত ১০ জনের ছোট-বড় অপারেশন করা হয়েছে।

বেশিরভাগ রোগীই সিঁড়ি দিয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে, পড়ে গিয়ে কিংবা আতঙ্কিত অবস্থায় ঘরের আসবাবপত্রের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে হাত-পা ভেঙে অথবা মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছেন। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে ছুটাছুটি, ভয় পেয়ে লাফ দেওয়া বা পদদলিত হয়ে আহত হওয়া প্রতিটি মানুষের মুখেই যেন একই অভিজ্ঞতা, একই গল্প। রোগী ও স্বজনদের কোলাহল, কান্না এবং ব্যথার গন্ধ মিলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সৃষ্টি করেছে এক ভিন্ন পরিবেশ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বাইরের থেকেও রোগীরা আসতে শুরু করেন। পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সারাদিনই ছিল আহত মানুষের ভিড়। হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের মতে, অধিকাংশ মানুষ সরাসরি ভূমিকম্পের কারণে নয়, বরং তীব্র ভীতি এবং আতঙ্কিত হয়ে দৌড়ানোর কারণে আহত হয়েছেন।
ডা. আবুল কেনান জানিয়েছেন, “এমন অবস্থা আমরা সাধারণত বড় দুর্ঘটনার দিনেই দেখি। বেশির ভাগ রোগীর হাত-পা ভাঙা, অনেকে মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছেন।” পরিস্থিতি সামলাতে হাসপাতালে অতিরিক্ত নার্স, ডাক্তার ও ওয়ার্ড বয় নিয়োগ করা হয়েছে।
আহতদের মধ্যে তানজিমা ফেরদৌসের মতো অনেকেই শারীরিক যন্ত্রণার মাঝেও বলেছেন, “মনের মধ্যে এখনও সেই টান, মনে হয় আবার কাঁপবে,” যা ভূমিকম্পের মানসিক প্রভাবকেই তুলে ধরে।
শুধু পঙ্গু হাসপাতাল নয়, এমন চিত্র দেশের বিভিন্ন হাসপাতালেরও। ভূমিকম্প শুধু মানুষের মধ্যে আতঙ্কই সৃষ্টি করেনি, পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোর জন্যও দিয়েছে সতর্কবার্তা।