
প্রতিনিধি 18 November 2025 , 12:07:14 প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের গণঅভ্যুত্থান দমনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ফাঁসির রায় ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ইতিহাসে শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে এমন শাস্তির নজির নতুন নয়। অতীতেও বহু রাষ্ট্রপ্রধান, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী বিচার, অভ্যুত্থান কিংবা বিপ্লব-পরবর্তী পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড বা কঠোর দণ্ডের মুখোমুখি হয়েছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধ, রাষ্ট্রদ্রোহ, গণহত্যা কিংবা সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে এদের অনেকেই ক্ষমতার চূড়া থেকে মৃত্যুদণ্ডের মঞ্চে পৌঁছেছেন।
১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল রাওয়ালপিন্ডি জেলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হত্যার ষড়যন্ত্র মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। পাকিস্তানে এ মৃত্যুদণ্ড ‘বিচারিক হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে চিহ্নিত।
২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ইরাকের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সাদ্দাম হোসেনকে দুজাইল গণহত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। মার্কিন আগ্রাসনের পর বিশ্বজুড়ে আলোচিত এ বিচার নিয়ে বিতর্ক আজও রয়েছে।
ইসলামী বিপ্লবের পর ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল ইরানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোভেইদাকে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সংক্ষিপ্ত বিচার ও কঠোর পদক্ষেপটি আজও বিতর্কিত।
১৯৮৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর দ্রুত বিচারে গণহত্যা, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট নিকোলাই চশেস্কু ও তার স্ত্রী এলেনাকে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সোভিয়েত ব্লকের পতনের সবচেয়ে নাটকীয় ঘটনার একটি এটি।
১৯৪৫ সালের ২৮ এপ্রিল পালিয়ে যাওয়ার সময় ইতালির পার্টিজানরা মুসোলিনি ও তার প্রেমিকাকে আটক করে গুলি করে হত্যা করে। ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের প্রতীক হয়ে রয়েছে এ ঘটনা।
১৯৫৮ সালের ১৬ জুন হাঙ্গেরির সমাজতান্ত্রিক নেতা ন্যাগিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হয়। ১৯৫৬ সালের ব্যর্থ বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে অনুষ্ঠিত এ বিচারকে ‘শো ট্রায়াল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ফরাসি সমর্থনে প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় মেক্সিকান সাম্রাজ্যের শাসক ম্যাক্সিমিলিয়ানকে ১৮৬৭ সালে রিপাবলিকান বাহিনী বন্দি করে সামরিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
১৬৪৯ সালে ইংরেজ গৃহযুদ্ধের পর ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লসকে শিরশ্ছেদ করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তার মৃত্যুদণ্ড সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও আধুনিক গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১৭৯৩ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় রাষ্ট্রদ্রোহে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ফ্রান্সের রাজা গিলোটিনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় ষোড়শ লুইয়ের। পরবর্তীতে রানি মারি আঁতোয়ানেতও একই যন্ত্রে মৃত্যুদণ্ড পান। ইউরোপে রাজতন্ত্রের পতনের প্রতীকী মুহূর্ত এটি।
