প্রতিনিধি 28 October 2025 , 3:56:19 প্রিন্ট সংস্করণ

ভারতের প্রভাবে বদলে যেত ক্রিকেটের নিয়ম! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন আইসিসির সাবেক ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড। নিজের দুই দশকের অভিজ্ঞতা থেকে জানিয়েছেন, দায়িত্ব পালনকালে একাধিকবার তাঁকে ভারতীয় দলের প্রতি ‘সহনশীল’ হতে বলা হয়েছিল। এমনকি স্লো ওভাররেটের ঘটনাতেও ভারতকে ছাড় দিতে ফোনে নির্দেশ এসেছিল তাঁর কাছে।
ব্রড ধীর ওভাররেটের ঘটনাবে নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ‘অস্বস্তিকর’ অভিজ্ঞতাগুলোর একটি বলে উল্লেখ করেছেন। দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক ইংলিশ রেফারি বলেন, ‘একটি ম্যাচে ভারত তিন-চার ওভার পিছিয়ে ছিল। নিয়ম অনুযায়ী এর জন্য জরিমানা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ম্যাচ শেষে আমি একটি ফোন কল পাই। সেখান থেকে বলা হয়, ভারত বলে একটু ছাড় দাও, কিছু সময় খুঁজে বের করো। তখন ভাবলাম, ঠিক আছে, কোনোভাবে সময় বের করতে হবে। তাই আমরা কিছু সময় খুঁজে বের করলাম, যাতে জরিমানার সীমা অতিক্রম না করে।’
ব্রড দাবি করলেন, পরের ম্যাচেও একই ঘটনা ঘটেছিল। সে প্রসঙ্গে বললেন, ‘পরের ম্যাচেও একই ঘটনা ঘটল। (সৌরভ গাঙ্গুলি) কোনো ‘হারি-আপ’ সংকেত মানছিল না। তখন আমি ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম, এবার কী করতে হবে? আমাকে বলা হলো, এবার তাকে করো (শাস্তি দাও)।

এই অভিজ্ঞতার পর ব্রড উপলব্ধি করেন, ক্রিকেট প্রশাসনের ভেতরে ভারতের প্রতি এক ধরনের বিশেষ আচরণ চলে আসছে, যা নিয়মের কাঠামোতেও প্রভাব ফেলছে।

দীর্ঘ ২০ বছর ম্যাচ রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ব্রড। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইসিসির সঙ্গে তাঁর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। বললেন, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও চুক্তি নবায়ন করা হয়নি, ‘আমি খুবই খুশি ছিলাম কাজ চালিয়ে যেতে। কিন্তু ২০ বছর ধরে আমি অনেকগুলো এড়িয়ে চলেছি— রাজনৈতিকভাবেও, শারীরিকভাবেও। এখন ফিরে তাকিয়ে মনে হয়, ২০ বছর এই কাজটা করার জন্য যথেষ্ট দীর্ঘ সময়।’
ব্রড বলেন, প্রায় দুই দশক ধরে তিনি বিভিন্ন দেশের রাজনীতি, বোর্ডের চাপ এবং মাঠের অনিশ্চয়তার মধ্যেও নিজের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন।
ক্রিস ব্রডের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ক্রিকেটার ভিন্স ভ্যান ডার বিজিল আইসিসির আম্পায়ার ম্যানেজার থাকাকালে রেফারিদের যথেষ্ট সমর্থন পেতেন, কারণ তিনি ছিলেন ক্রিকেটীয় ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা একজন মানুষ। কিন্তু তাঁর বিদায়ের পর আইসিসির ম্যানেজমেন্ট দুর্বল হয়ে পড়ে, আর তখন থেকেই ভারতের আর্থিক প্রভাব দ্রুত বাড়তে থাকে।
ব্রড বলেন, ‘আমরা ভিন্স ভ্যান ডার বিজিলের সময় ভালো সমর্থন পেতাম, কারণ তিনি ক্রিকেট থেকে উঠে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার পর ম্যানেজমেন্ট অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। ভারত সব টাকা পেয়ে গেল এবং এখন কার্যত আইসিসিকে দখল করে নিয়েছে— অনেক দিক থেকেই।’
পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য এখন আর দায়িত্বে নেই ব্রড। তাতেই যেন খুশি তিনি, ‘আমি খুশি যে এখন আর আমি ওই জায়গায় নেই। কারণ এখনকার অবস্থান আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক হয়ে গেছে।
দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারটি ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। এখন পর্যন্ত আইসিসি বা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) কারও পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, ক্রিস ব্রডের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। তাঁর অভিজ্ঞতা দেখিয়ে দিয়েছে— যেখানে অর্থ ও প্রভাব বাড়ে, সেখানে নিয়ম ও ন্যায়বিচার অনেক সময়ই দ্বিতীয় সারিতে চলে যায়।