বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ এখন বাস্তবে: প্রধান বিচারপতি

বিজ্ঞাপন

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বিচার বিভাগ সংস্কারে যে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছিল, সেটি এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বরিশালের একটি হোটেলে, ‘জুডিশিয়াল ইনডিপেন্ডেন্স অ্যান্ড এফিসিয়েন্সি ইন বাংলাদেশ’-শীর্ষক বিভাগীয় সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। ‘সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপি-বাংলাদেশ’ এর যৌথ উদ্যোগে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

বক্তব্যের শুরুতে প্রধান বিচারপতি বলেন, এক বছর বিচার বিভাগ সংস্কারে যে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছিল সেই রোডম্যাপ এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ফলে বদলে গিয়েছে আদালতের সংস্কৃতি, জনগণের প্রত্যাশা, এবং প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা। দীর্ঘদিন ধরে আইনজ্ঞ, গবেষক ও নাগরিকরা দাবি করে আসছিলেন একটি স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য এবং কলিজিয়াম ভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার যার মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল অর্ডিন্যান্স-২০২৫ প্রণয়নের মাধ্যমে সেই প্রত্যাশা পূর্ণ হয়েছে। এরমধ্যে এই প্রক্রিয়ায় আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে বহুল প্রতীক্ষিত জাতীয় ঐকমত্য আজ আইনে রূপান্তরিত হয়েছে এবং জনআস্থার যোগ্য একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুদৃঢ় হচ্ছে। একটি পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার ভিত্তি প্রায় সম্পূর্ণ’।

এর আগে দেশের ৭ বিভাগীয় শহর-ঢাকা, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার (সিলেট), রাজশাহী, ময়মনসিংহ, রংপুর ও খুলনায় এ সংক্রান্ত ৮টি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এই মধ্যে ঢাকায় হয় দুটি সেমিনার, যার মধ্যে একটি আঞ্চলিক ও একটি জাতীয়। বৃহস্পতিবার আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। অপরদিকে, সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণসহ বিচারসেবা প্রদানে দক্ষতা বৃদ্ধিতে করণীয় সম্পর্কে আয়োজিত এই সেমিনারটি সিরিজের সর্বশেষ সেমিনার।

বিজ্ঞাপন

সেমিনারে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন, ইউএনডিপি-বাংলাদেশ এর আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার। বিশেষ অতিথি ছিলেন-বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মি. হকোন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ্ কুক।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সক্রিয় সহযোগিতা ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী আমরা অগ্রসর হচ্ছি একটি যুগপৎ প্রশাসনিক দ্বৈতকাঠামো (পোস্টিং, বদলি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত) অবসানের পথে। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত হবে। প্রায় এক দশক ধরে স্থবির থাকা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের শৃঙ্খলা ও অপসারণের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া পুনঃস্থাপন কার হয়েছে’।

বিচার প্রক্রিয়ায় আধুনিকায়ন এবং বিচারপ্রার্থীদের জন্য হেল্প-লাইন সার্ভিস চালুকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের ৮ বিভাগীয় শহর ও ৬৪টি জেলায় হেল্পলাইন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এ সবকিছুর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সংস্কার রোডম্যাপের আরেকটি মাইলফলক হলো দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা পৃথকীকরণ। এছাড়া, জেলা পর্যায়ে ২৩২টি নতুন বিচারিক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এগুলো ক্রমবর্ধমান মামলা জট নিরসন এবং মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতা নিরসন করবে।

বিশেষায়িত বাণিজ্য আদালত প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগে বাণিজ্যিক আদালত অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশটি কেবল বিশেষায়িত আদালতই নয়, বরং দক্ষ বিচারক, প্রযুক্তিনির্ভর প্রক্রিয়া- যার মাধ্যমে বাণিজ্য সংক্রান্ত বিরোধগুলোর দ্রুত ও নিশ্চিত সমাধান পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করবে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং বাংলাদেশে ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ এর পরিবেশ আরও শক্তিশালী হবে।

সেমিনারে বরিশাল জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, শ্রম আদালতে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারাসহ বরিশাল জেলার বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা এবং ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলা জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও, সেমিনারে বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সরকারি কৌশুলি, পাবলিক প্রসিকিউটরসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেন।