প্রতিনিধি 1 November 2025 , 9:36:35 প্রিন্ট সংস্করণ

ক্যারিবীয় সাগরের অস্বাভাবিক উষ্ণতায় শক্তি সঞ্চয় করে ‘ক্যাটাগরি-৫’ তীব্রতার ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় মেলিসা জ্যামাইকায় আঘাত হেনেছে—দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হিসেবে। সোমবার (২৮ অক্টোবর) আঘাত হানা এই ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী একে “জাতীয় বিপর্যয়” আখ্যা দিয়েছেন। সূত্র: রয়টার্স
মেলিসার সর্বোচ্চ বেগ ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটারেরও বেশি ছিল, যা আটলান্টিক মহাসাগরীয় অঞ্চলের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে আবহাওয়া সংস্থা অ্যাকুওয়েদার (AccuWeather)।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (WMO) ঝড়বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যান-ক্লেয়ার ফন্টান বলেন, “জ্যামাইকার জন্য এটি শতাব্দীর ঝড়। এতো শক্তিশালী আঘাত দেশটি আগে কখনও দেখেনি।”
জ্যামাইকায় আগে কখনও ক্যাটাগরি ৪ বা ৫ এর ঝড়ের সরাসরি আঘাত হানেনি। ১৯৮৮ সালে গিলবার্ট ক্যাটাগরি ৩ এর ঝড়ের কারণে স্থলভাগে আঘাত হানে। এর পর মেলিসা জ্যামাইকায় আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী হারিকেন।

ঝড়ের কারণে জ্যামাইকার দক্ষিণ-পশ্চিমের ওয়েস্টমোরল্যান্ড ও সেন্ট এলিজাবেথ অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেন্ট এলিজাবেথের একমাত্র সরকারি হাসপাতাল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে জানান, পুনর্গঠনে এক দশকও লেগে যেতে পারে।
ক্ষয়ক্ষতি ও মানবিক বিপর্যয়
জ্যামাইকার প্রায় ৭৭% এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
জনপ্রিয় পর্যটন নগরী মন্টেগো বে-তে পানির উচ্চতা কোমর সমান পর্যন্ত উঠে যায়।
আবহাওয়া সংস্থা AccuWeather-এর হিসাব অনুযায়ী, মেলিসা প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রতিবেশী হাইতিতে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, মূলত বন্যায় ভেসে গিয়ে।
কিউবায় প্রায় ৭ লাখ ৩৫ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হলেও প্রাণহানি ঘটেনি।
মেলিসা এবারের মৌসুমে চতুর্থ ঘূর্ণিঝড় যা ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে ভয়াবহ শক্তি অর্জন করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, উষ্ণ সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড়গুলোকে আরও দ্রুত ও বিধ্বংসী করে তুলছে। ‘র্যাপিড ইনটেনসিফিকেশন’ বা দ্রুত শক্তিবৃদ্ধির এই প্রবণতা জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব।
ক্যারিবীয় দেশগুলো ধনী ও দূষণকারী দেশগুলোর কাছে পুনরায় আহ্বান জানিয়েছে, জলবায়ু বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তার জন্য কার্যকর “লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড” চালু করতে।
২০২৩ সালে গঠিত এই তহবিলটি দুর্যোগ-পরবর্তী পুনরুদ্ধারে সহায়তার জন্য হলেও ধনী দেশগুলোর অনুদান প্রত্যাশার অনেক নিচে রয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র গত মার্চে ফান্ডটির বোর্ড থেকে সরে যায়। তবে কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে অর্থ, ত্রাণ ও উদ্ধারকর্মী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।