প্রতিনিধি 30 October 2025 , 8:50:43 প্রিন্ট সংস্করণ

ছয় বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (অ্যাপেক) সম্মেলনের সাইডলাইনে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হতে যাচ্ছেন। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাণিজ্যিক টানাপোড়েন ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে।
ট্রাম্প ও শির শেষ মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়েছিল ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালে। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, এবার নতুন করে আলোচনায় বসার উদ্দেশ্য হলো, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুর্বল হয়ে পড়া বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি পুনর্গঠন করা। দুই দেশই সতর্ক কিন্তু আশাবাদী মনোভাব নিয়ে আলোচনায় বসছে। ওয়াশিংটন জানিয়েছে, তারা সম্পর্ক স্থিতিশীল করার জন্য একটি “গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো” তৈরি করতে চায়।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, মার্কিন আলোচকরা চীনের বিরল খনিজ রপ্তানি সীমিত করার পরিকল্পনা বিলম্বিত করার চেষ্টা করছেন—যা বিশ্বব্যাপী শিল্পখাতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এর বিনিময়ে বেইজিং আবারও মার্কিন সয়াবিন কেনা শুরু করতে পারে, যা মার্কিন কৃষকদের প্রতি শুভেচ্ছা প্রদর্শনের প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দীর্ঘদিন নিস্তব্ধ থাকা বাণিজ্যযুদ্ধ আবারও উসকে ওঠে এই মাসের শুরুতে, যখন বেইজিং বিরল খনিজ রপ্তানিতে বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপের প্রস্তাব দেয়—যা উচ্চপ্রযুক্তি পণ্য ও প্রতিরক্ষা খাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর জবাবে ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দেন এবং এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার ব্যবহার করে তৈরি পণ্যের ওপরও রপ্তানি সীমা আরোপের কথা বলেন—যা বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনকে বিপর্যস্ত করতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন।
তবে কঠোর ভাষার পরও ট্রাম্প আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে একটি চুক্তি হতে পারে। তিনি বলেছেন, যদি চীন ফেন্টানিল তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের রপ্তানি কমাতে রাজি হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করবে।

শুল্ক ও বাণিজ্যের বাইরেও, ট্রাম্প-শি বৈঠকে টিকটক ইস্যুটি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা চীনা মালিকানাধীন এই অ্যাপের বিষয়ে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, চূড়ান্ত চুক্তিটি সরাসরি শির সঙ্গে হতে পারে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই সপ্তাহের বৈঠকটি আগামী বছরে আরও কয়েকটি সাক্ষাতের সূচনা হতে পারে, যার মধ্যে পারস্পরিক সফরও থাকতে পারে—যা ইঙ্গিত দিচ্ছে, দুই দেশ দীর্ঘমেয়াদি আলোচনার দিকে এগোচ্ছে, এটি কোনো এককালীন সম্মেলন নয়।
ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে আগের অনেক শুল্ক ও বিরল খনিজ-সংক্রান্ত চুক্তি ১০ নভেম্বর শেষ হতে যাচ্ছে। এই কারণে কূটনৈতিক আলোচনার এ রাউন্ডটি আরও জরুরি হয়ে উঠেছে। পূর্ববর্তী চুক্তিগুলোর ফলে মার্কিন পক্ষের পাল্টা শুল্ক প্রায় ৫৫ শতাংশে এবং চীনের ১০ শতাংশে নেমে এসেছিল, পাশাপাশি গাড়ি থেকে শুরু করে যুদ্ধবিমান পর্যন্ত বিভিন্ন শিল্পে প্রয়োজনীয় বিরল খনিজ চুম্বকের প্রবাহ পুনরায় শুরু হয়েছিল।
বেইজিং এখন শুল্ক কমানো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি রপ্তানির ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা এবং চীনা জাহাজের ওপর নতুন বন্দর ফি প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে।
বুসান বৈঠকের মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের পাঁচ দিনের এশিয়া সফর শেষ হচ্ছে। সফরের সময় তিনি জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে এমন কিছু চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন, যা বিরল খনিজের বিকল্প সরবরাহ চেইন গড়ে তোলার মাধ্যমে চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্য রাখে।
তবে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে উত্তেজনা এখনো বিরাজমান। তাইওয়ান ইস্যু বড় আকারে সামনে এসেছে; সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দ্বীপটির কাছে এইচ-৬কে বোমারু বিমানের মহড়ার ফুটেজ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র আবারও তাইওয়ানের প্রতিরক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে, এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, অর্থনৈতিক চুক্তির বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র নিজের নিরাপত্তা স্বার্থ বিসর্জন দেবে না।
বৈঠকের আগের দিন বেইজিং তুলনামূলক শান্ত সুরে কথা বলেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুয়ো জিয়াকুন বুধবার বলেন, “চীন ইতিবাচক ফলাফলের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।”