প্রতিনিধি 25 October 2025 , 7:16:59 প্রিন্ট সংস্করণ

দেশে বড় ধরণের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেছেন, “সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে, এবং কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা তা দেখতে পারি। যদি এর সঙ্গে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ যুক্ত হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।”
শনিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিএম ভবনে ‘মাজার সংস্কৃতি: সহিংসতা, সংকট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সুফি সম্প্রদায় নিয়ে কাজ করা গবেষণা সংগঠন ‘মাকাম’।
ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ
মাহফুজ আলম বলেন, আওয়ামী লীগ নানাভাবে দরবার বা মাজারকেন্দ্রিক গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংযোগ তৈরি করার চেষ্টা করছে বলে তিনি শুনেছেন। “এমন প্রচারণা চলছে যে, অধ্যাপক ইউনূসের সরকার এলে মাজার ভেঙে দেবে বা মসজিদ থেকে লোকজনকে বের করে দেবে—এ ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ হয়তো চলে গেছে, কিন্তু সামাজিক জায়গায় সেটি এখনো রয়ে গেছে। ইসলামের বিভিন্ন ধারার মধ্যে সংলাপ ও সংযোগ তৈরি না হলে রাষ্ট্র বড় ধরনের শঙ্কার মুখে পড়বে।”
ধর্মীয় বিভাজন ও রাজনৈতিক ব্যবহার

দেশে ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ মুসলমানের মধ্যকার নানা তরিকার উল্লেখ করে মাহফুজ বলেন, “রাজনৈতিক নেতারা কখনোই ভাবেননি কীভাবে এই ধারাগুলোর মধ্যে সমন্বয় আনা যায়। বরং তারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন—কেউ কওমিদের, কেউ সুন্নিদের, আবার কেউ সুফিদের।”
তিনি জানান, গত ১৫ বছরে সুফি ধারার অনেক অনুসারী আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন—এক ধরনের পারস্পরিক সমঝোতায়। তবে রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর এই ব্যবহার দেশের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি।
বিদেশি প্রভাব ও ভবিষ্যৎ সংকটের আশঙ্কা
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে কিছু মুসলিম দেশের দূতাবাসের আদর্শিক প্রভাব কাজ করছে। “কোনো কোনো অ্যাম্বাসি চায় মাজারগুলো ধ্বংস হোক—এমন প্রবণতা বিপজ্জনক,” মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, “ধর্মীয় জনগোষ্ঠী লড়াই করবে বা সংঘাতে জড়াবে—এমন ভয় না পেয়ে, রাষ্ট্রীয় ও নীতিগত জায়গা থেকে এসব সংকটের সমাধান করতে হবে। না হলে সংঘাত ক্রমেই ঘনীভূত হবে।”
মাজার সংস্কার ও আইনি পদক্ষেপের আহ্বান
সম্প্রতি মাজারে হামলার প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম জানান, হামলার ঘটনায় অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্ত মাজারগুলোর সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি মাজার পরিচালনাকারীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা মামলা করুন। এই সহিংসতার সংস্কৃতি যদি টিকে যায়, তাহলে আজ সুফিদের মাজার ভাঙা হবে, কাল কওমিদের হবে—এভাবে চলতেই থাকবে।”
বক্তব্যের শেষে সাংবাদিকরা তার পদত্যাগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে মাহফুজ আলম তা উত্তর না দিয়ে আলোচনার বিষয়বস্তুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন।