
প্রতিনিধি 6 November 2025 , 1:32:10 প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে গুলিতে নিহত সরোয়ার হোসেন বাবলা ছিলেন পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে তিনি চট্টগ্রামের অপরাধ জগতে সক্রিয় ছিলেন।
একসময় কুখ্যাত ‘এইট মার্ডার’ মামলার আসামি ও সাজ্জাদ হোসেন খানের সহযোগী হিসেবে আলোচনায় আসেন বাবলা। পরবর্তীতে গুরু সাজ্জাদের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হলে নিজস্ব গ্যাং গঠন করেন তিনি। এরপর থেকেই সাজ্জাদ ও বাবলার মধ্যে বিরোধ চলতে থাকে। বাবলাকে একাধিকবার টার্গেট করে হামলার ঘটনাও ঘটে। সর্বশেষ বুধবার (৫ নভেম্বর) পিঠে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, সাজ্জাদ হোসেনের হাত ধরে অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন বাবলা ও তার সহযোগী নুরুন্নবী ম্যাক্সন। অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে চট্টগ্রামে ত্রাস ছড়াতেন তারা। ২০১১ সালের জুলাইয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিঙ্গারবিল থেকে গ্রেফতার হন ম্যাক্সন। তার তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে বাবলাকেও আটক করা হয়।

সে সময় তাদের কাছ থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল, দুটি পিস্তল, একটি এলজি, দুটি ম্যাগাজিন ও বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। ২০১৭ সালে কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে কাতারে চলে যান দুজনই। পরে সেখান থেকে চাঁদাবাজি পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ ছিল পুলিশের। কাতারে মারামারির ঘটনায় এক মাস কারাভোগের পর ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বাবলাকে দেশে ফেরত পাঠায় কাতার পুলিশ।

ঢাকায় পৌঁছে বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন তিনি। পরদিন চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানার খন্দকীয়া পাড়ায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ তার বাসা থেকে ৩০ রাউন্ড গুলিসহ একটি একে-২২ রাইফেল ও একটি এলজি উদ্ধার করে। প্রায় চার বছর কারাগারে থেকে জামিনে বের হওয়ার পর আবারও আলোচনায় আসেন বাবলা।
গত বছরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ও তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে বিএনপি নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি। কারাগারে থাকাকালীন চট্টগ্রাম-৪ আসনের বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার, যা মুক্তির পর আরও ঘনিষ্ঠ হয়। এরপর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের সঙ্গেও সম্পর্ক তৈরি হয়।
মাত্র এক মাস আগে বিয়ে করেন বাবলা। তার বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহ ও আবু সুফিয়ানসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতাও। বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশে তাদের পাশে দেখা গেছে তাকে।
বুধবার বিকালে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী এলাকায় গণসংযোগে গুলিবিদ্ধ হন বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহসহ তিনজন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ বাবলা পরে হাসপাতালে মারা যান।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ টার্গেট ছিলেন না। টার্গেট ছিলেন সরোয়ার বাবলা। তাকে নিশ্চিহ্ন করতেই এ হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনা কারা ঘটাতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের কিছু প্রাথমিক তথ্য আছে। নির্বাচনের আগে এমন ঘটনা আমাদের জন্য অশুভ বার্তা। সব রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ করছি, প্রচারণা শুরু করার ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশকে জানাতে হবে, যাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটা বিএনপির বিষয় নয়। প্রার্থীর প্রচারণায় শত শত মানুষ অংশ নিয়েছেন। সরোয়ার বাবলা সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঠিকই, তবে এটি দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের পুরনো বিরোধের জের।
সূত্রঃ ঢাকা নিউজ