প্রতিনিধি 15 October 2025 , 5:05:13 প্রিন্ট সংস্করণ

কোনো এক সময় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে তারকাদের আড্ডা জমত। এখানে, সেখানে নিয়মিত দেখা হতো ঢালিউড তারকাদের। মুহূর্তের নানা গল্পে জমে যেত আড্ডা। তেমনই আড্ডা জমে গেল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। তারকাদের ভাষ্যে, এ যেন ঢাকার শিল্পী সমিতির মতোই আড্ডায় হারিয়ে যাওয়া। এক খল অভিনেতার মুখোমুখি হয়েছিলেন ঢালিউডের ৪ নায়ক।
এই আড্ডায় ছিলেন খল অভিনেতা আহমেদ শরীফ। নায়কদের মধ্যে ছিলেন আমিন খান, জায়েদ খান, আলেকজান্ডার বো ও মামনুন ইমন। জায়েদ খান যুক্তরাষ্ট্র থেকে হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম আলোকে জানান, শিল্পী সমিতির নেতা থাকার সময়ে প্রায় নবীন–প্রবীণসহ সব বয়সী তারকাকে এক করতেন। জমিয়ে তুলতেন আড্ডা। এতে শিল্পীদের মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত হতো। সবার সঙ্গে যোগাযোগ থাকত। কিন্তু দীর্ঘ সময় যুক্তরাষ্ট্রে থাকার কারণে তাঁরা সবাই সেই আড্ডাটা খুব মিস করেন।
‘ঢালিউড তারকাদের অনেকেই রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। কেউ কেউ চার–পাঁচ বছর ধরে অবস্থান করছেন। কেউ দু’এক বছর ধরে। প্রায়ই আমাদের ঢালিউডের কেউ না কেউ আসছেন। সবার সঙ্গে পৃথকভাবে দেখা হয়। কিন্তু গ্রুপ ধরে আড্ডার সময় হয় না। বিভিন্নজন বিভিন্ন জায়গায় থাকেন। এবার আমিন খান ভাই আসার পরে দেখা হয়েছিল। তখন থেকে ভাবছিলাম সবাই একসঙ্গে কীভাবে হওয়া যায়। সেটা আমিন খান ভাইকে জানাই। ভাইয়ের সঙ্গে পরিকল্পনা করে নিউইয়র্কের একটি রেস্তোরাঁয় আমরা বসেছিলাম।’ বললেন জায়েদ খান।
বাংলাদেশের মতোই হাসি ঠাট্টায় মেতে ওঠেন ঢালিউডের এই ৫ তারকা। এই আড্ডায় যুক্ত হওয়ার কথা ছিল আরেক নায়ক বাপ্পী চৌধুরীর। তিনি আসতে পারেননি। জায়েদ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের রেস্তোরাঁয় জমে যায় বাংলাদেশের জসীম, শাবানাদের কথা। জসীমের সঙ্গে অভিনয় করা সিনেমাগুলোর একাধিক সংলাপও শুনিয়েছেন আহমেদ শরীফ। আড্ডায় উঠে আসে সোনালি দিনের সিনেমার দিনগুলোর কথাও। রাজ্জাক-কবরী থেকে সালমান শাহ, শাকিব খান কেউ যেন বাদ যায় না।

জায়েদ বলেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আহমেদ শরীফ ভাই। ৮ শতাধিক সিনেমার এই খল অভিনেতার জীবনের বহু ঘটনা রয়েছে। একসময় সম্পর্ক থেকে জসীম ভাই তাঁকে ছাড়া শুটিং করতে চাইতেন না। তিনি নাকি ববিতা আপার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাঁর আগেই শুটিংয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন, কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই হেরে যেতেন। মজা করে সেগুলো বললেন। কীভাবে অভিনয় শিখেছেন। তখন নবীন–প্রবীণদের সম্পর্ক কেমন ছিল। ঢালিউড চলচ্চিত্রকে যাঁরা এগিয়ে নিয়েছেন, সেগুলো নিয়ে কথা হয়। আমিন ভাই, ইমন, আলেকজান্ডার বো সবাই সেই অভিজ্ঞতা শুনি। সব মিলিয়ে দারুণ সময় কাটে। নিউইয়র্কের এই সময়টায় মনে হয়েছিল এফডিসির শিল্পী সমিতিতেই আছি।’
আড্ডায় অংশ নেওয়া আরেক অভিনেতা মামনুন ইমন। তিনি কয়েক মাস হলো যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি বলেন, ‘আমিন ভাই দাওয়াত দিয়েছিলেন। সবাই এল, দেখা করলাম। অবাক হয়েছি অভিনেতা আহমেদ শরীফ ভাই। তাঁর বয়স ৮০ বছরের বেশি। কিন্তু তিনি এখনো প্রাণবন্ত মানুষ। সবাইকে পেয়ে অনেক দিন পরে এমন ভালো সময় কাটল। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে, আহমেদ শরীফ ভাই তাঁর সময়ের সব সিনিয়র ও সহশিল্পীকে খুবই সম্মান করেন। পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে জসীম ভাইকে গুরু মানেন। আলমগীর ভাই, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ভাইসহ সবার প্রতি তাঁর অনেক শ্রদ্ধা। এই শ্রদ্ধাবোধ এই সময়ের শিল্পীদের মধ্যে পাওয়া যায় না। আহমেদ শরীফ ভাইয়ের ক্যারিয়ারের নানা গল্পে অনেক অজানা কিছু জেনেছি, শিখেছি।
জায়েদ খান জানালেন, ঢালিউডের এই চার সহকর্মীকে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন আহমেদ শরীফ। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই চাইছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে এভাবে আড্ডা দিতে। এভাবে চার নায়কের সঙ্গে আগে কখনোই আড্ডা জমেনি। তিনিও ইমোশনাল হয়ে যান। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে, এই খলনায়ক ও নায়কেরা বাংলা সিনেমার শেষ দৃশ্যগুলো যেমন হয়, সেভাবে অভিনয় করে দেখান।
মজার সেই ঘটনা নিয়ে জায়েদ বলেন, ‘বাংলা সিনেমার একদম শেষে সচরাচর কী হয়। শেষে নায়কেরা ভিলেনকে হারিয়ে প্রতিশোধ নেন। এগিয়ে থাকেন নায়ক। ভিলেনকে হার মানতে হয়। সেই দৃশ্য দেখে দর্শকেরা ঘরে ফেরে। আমরা সেভাবেই চার নায়ক মিলে জাপটে ধরি আহমেদ শরীফ ভাইকে। বিষয়টা এমন যেন তিনি নিজেকে ছোটাতে পারছেন না। সিনেমার শুটিংয়ের মতোই আমরা মজা করে সংলাপও দিতে থাকি।