প্রতিনিধি 29 September 2025 , 12:39:04 প্রিন্ট সংস্করণ

১৯তম ওভারের নিজের শেষ বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হলেন দুবে। তাঁকে ফেরালেন ফাহিম আশরাফ। তারপরও ভারতের লক্ষ্য পৌছােতে কেউ বাধা হতে পারল না। ১৯.৪ ওভারে ১৫০ রান তুলে। ভারত ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে এশিয়া কাপের শিরোপা আবারও ঘরে তুলে নিলেন।
এশিয়া কাপের ফাইনাল যেন রূপ নেয় নাটকীয় পতনের গল্পে। ১ উইকেটে ১১৩ রানে পাকিস্তান যখন অপ্রতিরোধ্য ভঙ্গিতে এগোচ্ছিল, তখনো কেউ ভাবেনি শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৪৬ রানে গুটিয়ে যাবে তারা। ৪৪ বল হাতে থাকা অবস্থায় পতন হয় বাকি ৯ উইকেটের। তাও আবার ধসটা হয়েছে মাত্র ৩৩ রানের ব্যবধানে! তার পরও আগের দুই লড়াইয়ের মতো সহজ হয়নি ম্যাচ। এবারের লড়াই ছড়িয়েছে রোমাঞ্চ। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচ শেষ ওভারে গিয়ে জিতেছে ভারত। ৫ উইকেটের জয়ে শিরোপা থাকলো তাদেরই হাতে। ভারত ১৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করেছে দুই বল হাতে রেখে।
শাহেবজাদা ফারহান ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিলেন। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ভারতের বোলারদের চাপে ফেলে দিয়েছিলেন। কুলদীপ যাদবের প্রথম দুই ওভারে ২৩ রান নেন পাকিস্তানি ব্যাটাররা। চোটের কারণে হার্দিক পান্ডিয়ার না থাকা ভারতের জন্য ছিল উদ্বেগজনক।
ফারহান–ফখরের উদ্বোধনী জুটি দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলাবলি হচ্ছিল, ভারতকে ২০০ রানের লক্ষ্য দেবে পাকিস্তান।কিন্তু ২০০ দূরে থাক; ১৫০ রানও করতে পারল না আগা সালমানের দল। ইনিংসের ৫ বল বাকি থাকতেই অলআউট হলো ১৪৬ রানে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হলেন মোহাম্মদ নেওয়াজ। তিনিও বুমরার শিকার।
দুই ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান এবং ফাখর জামান মিলে ৯.৪ ওভারে গড়ে তুলেছিলেন ৮৭ রানের অনবদ্য জুটি। ৩৮ বলে ৫৭ রান করে সাহিবজাদা ফারহান আউট হলে এই জুটি ভাঙে। এরপর ফাখর জামান যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, ততক্ষণ রানের চাকা সচল ছিল; কিন্তু বাকি ব্যাটাররা দিলেন যারপরনাই ব্যর্থতার পরিচয়।

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের ফাইনালের আগে ৫বার মুখোমুখি হয়েছিল ভারত এবং পাকিস্তান। প্রতিবারই জয় পেয়েছে পরে ব্যাট করা দল। ইতিহাসের পূনরাবৃত্তি ঘটাতে আজও টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিলেন ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। আর ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানান পাকিস্তানকে।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারটায় শিবাম দুবেকে একটু দেখে-শুনে খেলেন পাকিস্তান ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান। তবে দ্বিতীয় ওভারেও জসপ্রিত বুমরাহকে প্রথম কয়েক বল দেখে খেলেই চড়াও হতে শুরু করেন পাকিস্তানি ওপেনাররা।
সাহিবজাদা ফারহান এবং ফাখর জামান মিলে পাকিস্তানকে এনে দিলেন দারুণ সূচনা। প্রথম পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে তারা সংগ্রহ করে ৪৫ রান। যদিও এই ৬ ওভারের মধ্যে চারজন বোলার ব্যবহার করেছেন ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার। কিন্তু আউটের কোনো সম্ভাবনাই তৈরি করতে পারেননি তারা।
পাওয়ার প্লের পর আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে সাহিবজাদা ফারহান এবং ফাখর জামান। এরই মধ্যে ৩৫ বলে ৫টি বাউন্ডারি ও ২টি ছক্কা মেরে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলেন ফারহান।
১০ম ওভারে বল করার জন্য বরুন চক্রবর্তিকে ডেকে আনেন সূর্যকুমার। ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা হজম করেন তিনি। কিন্তু চতুর্থ বলে আবারও ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে তিলক বার্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সাহিবজাদা ফারহান। ৩৮ বলে ৫৭ রান করেন তিনি। ৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছক্কা মারেন তিনটি।
এরপর ফাখর জামান আর সাইম আইয়ুবের জুটিটা দারুণ জমে উঠেছিল। ২৯ রানের এই জুটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত মনে হচ্ছিল পাকিস্তানকে অনেক বড় একটি স্কোর এনে দেবে।
পুরো এশিয়া কাপের অন্যান্য ম্যাচের মত সাইম আইয়ুব আজও ব্যর্থ। ১১ বলে তিনি আউট হলেন ১৪ রান করে। টপ অর্ডারে তিন ব্যাটার ছাড়া পাকিস্তানের আর কোনো ব্যাটারই দুই অংকের ঘর স্পর্শ করতে পারেননি।
৪র্থ ব্যাটার হিসেবে ফাখর জামান ৩৫ বলে ৪৬ রান করে আউট হওয়ার পর পাকিস্তানের বড় স্কোরের আশা শেষ হয়ে যায়। যেখানে অন্তত ১৮০ রান ওঠার কথা ছিল সেখানে, শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৪৬ রানে অলআউট পাকিস্তান! মোহাম্মদ হারিস শূন্য, সালমান আলি আগা ৮, হুসাইন তালাত ১, মোহাম্মদ নওয়াজ ৬, শাহিন আফ্রিদি শূন্য, ফাহিম আশরাফ শূন্য, হারিস রউফ ৬ রান করে আউট হন।
ভারতের হয়ে কুলদিপ যাদব ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। ২টি করে উইকেট নেন জসপ্রিত বুমরাহ, বরুন চক্রবর্তি ও অক্ষর প্যাটেল।