প্রতিনিধি 26 September 2025 , 10:20:48 প্রিন্ট সংস্করণ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে শ্রম সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি ফেব্রুয়ারির আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগেই আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল সংস্কার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে শ্রম অধিকার ও সংস্কার নিয়ে নৈশভোজের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, উচ্চপর্যায়ের এ নৈশভোজে কূটনীতিক, জাতিসংঘ কর্মকর্তাসহ বাংলাদেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা দেশের শ্রম আইন, শ্রমিক অধিকার এবং চলমান সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নিয়ে শ্রম ইস্যুতে উন্মুক্ত ও গঠনমূলক মতবিনিময় করেন।
লুৎফে সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় আইএলও মহাপরিচালক এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
অংশগ্রহণকারীরা শ্রম সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির প্রসার নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেন। প্রধান উপদেষ্টার আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের আগে তিন রাজনৈতিক দলের নেতারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। তারা গার্মেন্টস খাতের গুরুত্ব উল্লেখ করে শ্রম খাতে ধারাবাহিক সংস্কারের প্রতি সমর্থন জানান।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সময় বলেন, গার্মেন্টস খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি। ভবিষ্যতের যে কোনো সরকারকে এ খাতের টেকসই উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম সংস্কার ও আইএলও অঙ্গীকার বাস্তবায়নের উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের জানান, তার দলের অনেক নেতাকর্মীর গার্মেন্টস খাতে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা রয়েছে, যা এ খাতকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডার প্রতি সমর্থন জানান এবং নির্বাচিত হলে তা আরও এগিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির বলেন, বর্তমান শ্রম উদ্যোগ শুধু অব্যাহত নয় বরং ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত হওয়া উচিত।
তিন নেতার বক্তব্যেই একটি সাধারণ বিষয় উঠে আসে- বাংলাদেশের গার্মেন্টস রপ্তানিতে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা জরুরি। বক্তারা বলেন, সবসময় ক্রেতার শর্তেই নয়, আমাদেরও শর্ত নির্ধারণের সুযোগ থাকা উচিত। এ মন্তব্যে দলমত নির্বিশেষে সম্মতি দেখা যায়।
ন্যাশনাল সিটিজেন্স পার্টি (এনসিপি)-এর জ্যেষ্ঠ নেতা ডা. তাসনিম জারা তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
তিনি জানান, রানা প্লাজা দুর্ঘটনা তার রাজনৈতিক যাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল। তখন তিনি চিকিৎসা শিক্ষার্থী হিসেবে দুর্ঘটনাস্থলে আহতদের সেবা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ওই ঘটনাই আমার রাজনীতিকে গড়ে দিয়েছে। এর পাশাপাশি তিনি শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।
সমাপনী বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অর্থবহ ও স্থায়ী সংস্কার বাস্তবায়নের সরকারে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।