প্রতিনিধি 20 September 2025 , 3:12:52 প্রিন্ট সংস্করণ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ ফেরত পেতে ওয়াশিংটন আলোচনা চালাচ্ছে। শুক্রবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “বিমানঘাঁটিটি ছেড়ে দেওয়া উচিত হয়নি।” এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে। সে সময় থেকেই বাগরাম বিমানঘাঁটি মার্কিন বাহিনীর প্রধান কৌশলগত ঘাঁটিতে পরিণত হয়। এই ঘাঁটি থেকেই সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া হতো। দুই দশকের দীর্ঘ যুদ্ধ শেষে ২০২১ সালে হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর ঘাঁটিটি তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
অনেক বিশ্লেষকের মতে, বাগরাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া ছিল আফগানিস্তানে আমেরিকার প্রভাব কমে যাওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত। একই সঙ্গে মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে চীন ও রাশিয়ার জন্য সুযোগ তৈরি হয়।
হোয়াইট হাউসে শুক্রবারের মন্তব্য ছাড়াও একদিন আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনেও ট্রাম্প বলেন, ওয়াশিংটন আবারও ঘাঁটিটির নিয়ন্ত্রণ চায়। তিনি ইঙ্গিত দেন, আফগানিস্তান সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ চলছে।

তবে আফগানিস্তান তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি নাকচ করেছে। আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জাকির জালাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, “আমাদের দেশে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক বেসামরিক ও কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমেই বাড়ানো সম্ভব।”
কৌশলগত গুরুত্ব কেন এত বেশি?
বাগরাম বিমানঘাঁটি আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এটি মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে এক ধরনের সংযোগকেন্দ্র। এ ঘাঁটি নিয়ন্ত্রণ মানে আঞ্চলিক রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব খাটানো সম্ভব হওয়া।
মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, এখান থেকে শুধু আফগানিস্তান নয়, ইরান, পাকিস্তান, এমনকি চীন পর্যন্ত নজরদারি করা সম্ভব। তাই ঘাঁটিটি ফেরত পেলে যুক্তরাষ্ট্র মধ্য এশিয়ায় আবারও কৌশলগতভাবে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবে।
আফগানিস্তানের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী তালেবান বারবার বলছে, বিদেশি সামরিক উপস্থিতি ছাড়া তারা দেশ পরিচালনা করতে চায়। তালেবানের শাসনব্যবস্থা বিতর্কিত হলেও তারা জানে, বিদেশি সেনা ফেরালে জনগণের কাছে তাদের বৈধতা আরও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
অন্যদিকে আফগান কর্মকর্তারা মনে করছেন, বাগরাম বিমানঘাঁটি মার্কিনিদের হাতে গেলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে (বিশেষ করে চীন, ইরান ও রাশিয়ার সঙ্গে) সম্পর্ক খারাপ হয়ে যেতে পারে। ফলে তারা মার্কিন প্রস্তাবে রাজি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
ট্রাম্পের মন্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ছেড়ে গেলেও পুরোপুরি আগ্রহ হারায়নি। বাগরাম বিমানঘাঁটির মতো একটি কৌশলগত স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ ফেরত আনার প্রচেষ্টা মার্কিন ভূরাজনৈতিক লক্ষ্যকেই ইঙ্গিত করছে। তবে আফগানিস্তানের কড়া অস্বীকৃতি এবং প্রতিবেশী শক্তিগুলোর বিরোধিতার কারণে এ উদ্যোগ সফল হওয়ার সম্ভাবনা এখনো ক্ষীণ।