প্রতিনিধি 13 September 2025 , 9:03:30 প্রিন্ট সংস্করণ

‘নো ওয়েজ বোর্ড নো মিডিয়া’ নীতি কার্যকর, সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণ এবং প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার জন্য ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের দাবিসহ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ রিভিউ করার তাগিদ দিয়েছেন সাংবাদিকরা। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব দাবি জানান। ডিআরইউ ও জার্নালিস্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ডিআরইউ-সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, জার্নালিস্ট কমিউনিটির সদস্য সচিব মো. মিয়া হোসেন। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, সাংবাদিকদের নিবন্ধন করে আইডি প্রদান, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য অভিন্ন বেতন কাঠামো প্রণয়ন এবং ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের ডিক্লারেশনের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন করা প্রয়োজন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন-বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ, বিএফইউজের সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও রফিকুল ইসলাম আজাদ, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক একরামুল হক ভূঁইয়া (লোটন একরাম), ঢাকা মেইল ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক হারুন জামিল, ডিআরইউ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মাসুম, মসিউর রহমান খান, ডিআরইউ’র সহ-সভাপতি গাযী আনোয়ার, ডিইউজে’র যুগ্ম সম্পাদক ও জার্নালিস্ট কমিউনিটি বাংলাদেশের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য দিদারুল আলম এবং সিনিয়র সাংবাদিক হাফিজুল ইসলাম প্রমুখ।
শফিকুল আলম বলেন, ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে অনেক ভালো সুপারিশ আছে। আর যেসব জায়গায় অসংগতি রয়েছে সেগুলোর সমালোচনা করা প্রয়োজন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের যে ধারা তুলে দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তা থাকা প্রয়োজন। কেননা ধর্মীয় কারণে অনেক ভায়োলেন্স তৈরি হয়। এসব ভায়োলেন্স বন্ধ করার জন্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের শাস্তির বিধানটা থাকা প্রয়োজন। নো ওয়েজ বোর্ড নো মিডিয়া নীতিরসঙ্গে আমি একমত। এটি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। যারা সম্পাদক ও প্রকাশক হবেন তাদের ইউনিয়ন থেকে পদত্যাগ করা উচিত। কারণ এটি নীতি বিরুদ্ধ। সাংবাদিকদের অবশ্যই সার্টিফিকেশন থাকতে হবে। কারণ অপসাংবাদিকতার কারণে দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে’।

প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘সাংবাদিকদের বেতন নূন্যতম ৩৫ হাজার টাকা হওয়া উচিত। আর সাংবাদিকরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় পড়লে এর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মিডিয়া মালিককে নিতে হবে। প্রয়োজনে মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। প্রতিবাদকে-মব হিসেবে না দেখার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন তিনি। এ ছাড়া মিডিয়া লাইসেন্স নিতে হলে অনলাইনের জন্য ১০ থেকে ১৫ কোটি, পত্রিকার জন্য ২০ কোটি ও টিভির জন্য ২০-২৫ কোটি টাকা সিকিউরিটি হিসেবে সরকারের কাছে জমা রাখতে হবে। যখন হাউজগুলো ভালনারেবল হবে তখন সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য এগুলো কাজে আসবে’।
ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, ‘আমাদের অধিকার আমাদের আদায় করে নিতে হবে। বিপ্লবের পরে মিডিয়ার কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন হয়নি। সাংবাদিকরা এখনো মবের শিকার হচ্ছে। ডিএফপির অনিয়মের কারণে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যবস্থা নিচ্ছে না সরকার’। এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘ইউনিয়নের পাশাপাশি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, প্রেস ক্লাব ও অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে সরকারের স্বীকৃতি দেয়া দরকার। কারণ সারাদেশে ইউনিয়নের শাখা নেই। প্রবীণ সাংবাদিকদের ভাতার আওতায় আনতে হবে’।
ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, ‘গণমাধ্যম কমিশন মূলত বিভিন্ন জেলায় পিকনিক করেছে। স্বচ্ছতা ও সত্যতার অনেক ঘাটতি রয়েছে তাদের রিপোর্টে। এই রিপোর্ট রিভিউ হওয়া দরকার। মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, যারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং পদধারী তারা সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতে নৈতিকভাবেই পারেন না’। সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনসহ সরকারের মিডিয়া বিষয়ক বিভিন্ন কমিটিতে ডিআরইউ’র প্রতিনিধি না থাকলে সত্যিকারের গণমাধ্যম সংস্কার হবে না। সাংবাদিক সুরক্ষা আইন যথাযথ হওয়া দরকার’।
রফিকুল ইসলাম আজাদ বলেন, ‘সাংবাদিকদের চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা জরুরি’। মসিউর রহমান খান বলেন,‘ মিডিয়ার সংখ্যা বাড়লেও কোনো সরকারই সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কোনো কাজ করেনি। মালিকরা মিডিয়ায় বিনিয়োগ করে তাদের পুঁজির নিরাপত্তার জন্য’। লোটন একরাম বলেন, ‘টিভি এবং অনলাইনকে ওয়েজবোর্ডের নীতিমালায় আনা দরকার। পত্রিকার সার্কুলেশনের মতো টিভির টিআরপিও হাস্যকর’।
হারুন জামিল বলেন, ‘সাংবাদিকদের সপ্তাহে ২ দিন ছুটি দেয়া খুবই জরুরি’। গাযী আনোয়ার বলেন, ‘কমিশনের রিপোর্টে আদিবাসী অথবা উপজাতি কোনো শব্দই আসা উচিত নয়। সবাই বাংলাদেশি। আর সাংবাদিকদের হত্যা-নির্যাতনের বিচারের জন্য আলাদা কমিশন গঠন করতে হবে’। দিদারুল আলম বলেন, ‘সাংবাদিকদের আয়কর মালিকদের দেয়ার বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় আছে। এটি বাস্তবায়ন করা দরকার। তাছাড়া মফস্বল সাংবাদিকদের বেতন কাঠামো বিষয়ে সুপারিশে বিস্তারিত আসা দরকার’।