নিজস্ব প্রতিবেদক 6 September 2025 , 11:47:50 প্রিন্ট সংস্করণ
‘ভোট হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর যখন-তখন কল দিয়ে ভোট চায় জেলাভিত্তিক রাজনৈতিক কমিটির নেতারা। হোয়াট ইজ দিস ননসেন্স, ভাই? আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ওইসব লোক আমাদের ব্যক্তিগত নম্বর পায় কীভাবে?…এখানে আমার প্রাইভেসি নষ্ট হচ্ছে, আমি আমার ব্যক্তিগত নম্বরে কল দিতে যাকে-তাকে অ্যালাও করব না, তা–ও কল দিয়ে আবার আমার সব ডিটেইল (বিস্তারিত) বলে তারা। এ জন্য হলেও আপনারা অনেক শিক্ষার্থীর বিরক্তির কারণ হওয়ায় ভোট হারাবেন। সুস্থ রাজনীতি করার অনুরোধ রইলো।’
আজ শনিবার বিকেলে ফেসবুকে এক পোস্টে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী সাবরিনা জাহান। তবে এ নিয়ে তিনি কোনো নির্দিষ্ট সংগঠন বা দলের নাম উল্লেখ করেননি।
সাবরিনার মতো আরও অনেক শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অভিযোগ করেছেন, আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন সামনে রেখে তাঁদের ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করে নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ভোট চাইছেন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা। প্রকাশ্যে এমন অভিযোগ বেশি আসছে ছাত্রদল ও বিএনপির বিরুদ্ধে। ছাত্রদলের এক প্রার্থী শিক্ষার্থীদের এভাবে ফোন না দিতে বিএনপির নেতা–কর্মীদের প্রতি অনুরোধও জানিয়েছেন।
আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক সামিয়া আক্তার রোকেয়া হল সংসদে জিএস (সাধারণ সম্পাদক) প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আজ সন্ধ্যায় তিনি ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘কিছুক্ষণ আগে আমার ফোনে একটি কল আসে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতির পক্ষ থেকে। আমাকে বলা হলো, যেন ৯ তারিখ ছাত্রদলের প্যানেলে ভোট দিই। এখানে আমার মূল প্রশ্ন হলো—আমি আমার ভোট নিজেই দেব এবং যাকে খুশি তাকে ভোট দেব। একজন জেলা পর্যায়ের বিএনপি সভাপতি কি আমার ভোট ঠিক করে দেওয়ার অধিকার রাখেন? তাঁর কমান্ডে আমার ভোট দিতে হবে?’
তাঁর ফোন নম্বর কীভাবে একজন জেলা নেতার কাছে পৌঁছাল, সেই প্রশ্ন তুলে এই ছাত্রী আরও লিখেছেন, ‘এটি শুধু প্রাইভেসির (ব্যক্তিগত গোপনীয়তা) লঙ্ঘন নয়, বরং নারীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্যও এক গুরুতর ঝুঁকি। বিশেষভাবে, নারীদের নম্বর এভাবে অন্য ব্যক্তিদের কাছে সরবরাহ করা তাঁদের নিরাপত্তা ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় হুমকি।…আমার নিরাপত্তা এবং প্রাইভেসি নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।…আমার মনে হচ্ছে, ভোটের স্বাধীনতা এবং নারীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা—দুটোই এখনই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। এ ব্যাপারে ছাত্রদলের দায়িত্বশীলদের অবস্থান জানতে চাচ্ছি।’
শামসুন নাহার হল সংসদে এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে প্রার্থী হওয়া নিয়ম মনি দুপুরে ফেসবুকে লেখেন, ‘আজ সকালে আমার ফোনে একটা কল আসে, স্থানীয় বিএনপির একজন নেতা আমাকে কল দেন এবং ছাত্রদলকে যেন ভোট দিই, তার জন্য প্রেশারাইজ করেন (চাপ প্রয়োগ করেন) এবং বলেন, আমাদের উপজেলার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে ৯ তারিখের আগে দেখা করবেন, যেন ছাত্রদলের প্যানেলকেই আমরা ভোট দিই। প্রথমত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা শিক্ষার্থী কাকে ভোট দেবে না দেবে এটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আপনারা সর্বোচ্চ অনুরোধ করতে পারেন, কিন্তু ছাত্রদলের প্যানেলকেই ভোট দিতে হবে—এ সিদ্ধান্ত আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারেন না। এই এখতিয়ার কি আদৌ আপনার আছে?’
এদিকে ছাত্রদলের প্যানেলের পক্ষে ভোট চেয়ে শিক্ষার্থীদের ফোন না দিতে বিএনপির নেতা–কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডাকসুর জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে ছাত্রদলের প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের আপামর জনতা এবং বিএনপি নেতা–কর্মী, সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী যাঁরা আমাকে কিংবা আমার প্যানেলকে সমর্থন করছেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ—কোনো শিক্ষার্থীকে কল করে আমাদের জন্য ভোট চেয়ে প্লিজ (দয়া করে) তাঁদের বিব্রত করবেন না। আমি আপনাদের আবেগ-অনুভূতি-সমর্থনের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখিয়ে আপনাদের অনুৎসাহিত করছি। আমি জানি, এ দেশের আপামর জনতার দোয়া, সমর্থন ও ভালোবাসা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। এ সময়ে আপনাদের দোয়াই আমার ও আমাদের কাছে মুখ্য।’