আইন-আদালত

নয় আইনের বিরোধ নিষ্পত্তি মধ্যস্থতার চেষ্টা না করলে সরাসরি মামলা হবে না

  প্রতিনিধি 17 September 2025 , 12:04:38 প্রিন্ট সংস্করণ

নয় আইনের বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা না করলে সরাসরি মামলা হবে না
নয় আইনের বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা না করলে সরাসরি মামলা হবে না
বিজ্ঞাপন
Main Banner Ads For Captains TV

নয়টি (পাঁচটি দেওয়ানি ও চারটি ফৌজদারি) আইনের বিরোধ প্রচলিত আদালতে মামলা দায়েরের আগেই মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করে জারি করা বিধান আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ১২টি জেলায় কার্যকর হচ্ছে। এই জেলাগুলো হচ্ছে- ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, রংপুর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাঙামাটি, সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ। এই বিধান কার্যকর করার জন্য গতকাল মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া এই বিধান প্রয়োগের জন্য বিধি তৈরি করেছে সরকার। সেই বিধিও গতকাল প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়েছে। আজ বুধবার এই কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে সিলেটে। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এর উদ্বোধন করবেন।

এর আগে গত ১ জুলাই ‘আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে সরকার লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে ৯টি আইনের বিরোধ মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করে বিধান জারি করে। এই বিধান কার্যকর করার ফলে, মামলা দায়েরের আগে এসব আইনের বিরোধ লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে বিরোধের কোনো পক্ষ প্রয়োজনে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবে। মধ্যস্থতার মাধ্যমে এসব আইনের বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা না করে কেউই সরাসরি মামলা দায়ের করতে পারবে না।

যেসব আইনের বিরোধ মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্যোগ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে পারিবারিক আদালত আইন, ২০২৩-এর ধারা ৫-তে উল্লেখিত বিষয়; বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১-তে উল্লেখিত বিরোধ; সহকারী জজ আদালতের এখতিয়ারভুক্ত কটন সম্পর্কিত বিরোধ; স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেনান্সি অ্যাক্ট-১৯৫০-এর সেকশন ৯৬-তে উল্লেখিত অগ্রক্রয় সম্পর্কিত বিরোধ; নন-এগ্রিকালচার টেনান্সি অ্যাক্ট, ১৯৪৯-এর সেকশন ২৪-এ উল্লিখিত অগ্রক্রয় সম্পর্কিত বিরোধ: পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন, ২০১৩-এর ধারা ৮ অনুসারে পিতা-মাতার ভরণপোষণ সম্পর্কিত বিরোধ; নিগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্ট, ১৮৮১-এর সেকশন ১৩৮-এ বর্ণিত চেক ডিজঅনার সম্পর্কিত অভিযোগ (অনধিক ৫ লাখ টাকা মূল্যমান চেকের ক্ষেত্রে); যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮-এর ধারা ৩ ও ৪ তে বর্ণিত যৌতুক সম্পর্কিত অভিযোগ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ধারা ১১(গ)-তে বর্ণিত যৌতুকের জন্য নির্যাতন সম্পর্কিত অভিযোগ।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, ২০০০ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের ২১ক ধারা অনুসারে সারা দেশে লিগ্যাল এইড অফিসার বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি করেন এবং আইনি সেবাপ্রত্যাশীদের আইনি পরামর্শ প্রদান করেন। ২০০৯ সাল থেকে সরকারি খরচে সারা দেশে অসহায় বিচারপ্রার্থীদের জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার মাধ্যমে আইনি সহায়তা প্রদান কার্যক্রম চালু হয়েছে। আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য প্রতিটি জেলায় বর্তমানে একজন করে লিগ্যাল এইড অফিসার রয়েছেন। লিগ্যাল এইড অফিসার একজন বিচারক এবং লিগ্যাল এইড অফিসারের কর্মকে এরই মধ্যে গেজেট দ্বারা বিচারিক কর্ম হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। আইনের অধীনে থেকে লিগ্যাল এইড অফিসার ‘মধ্যস্থতা কার্যক্রম’ পরিচালনা করেন এবং আইনি প্রক্রিয়ায় দুই পক্ষের সম্মতি ও সমঝোতায় মধ্যস্থতা চুক্তি সম্পাদন করে থাকেন। এ প্রক্রিয়ায় বিরোধ নিষ্পত্তিতে সুফলও মিলছে। অর্থ ও সময় দুটিই সাশ্রয় হচ্ছে।

২০০৯ সাল থেকে গত মার্চ পর্যন্ত এই সংস্থায় ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫ জন অসচ্ছল বিচারপ্রার্থী বিনামূল্যে আইনি সেবা নিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস, দেশের ৬৪ জেলা লিগ্যাল এইড অফিস, ঢাকা ও চট্টগ্রাম শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেল, সরকারি আইনি সহায়তায় জাতীয় হেল্পলাইন কলসেন্টারে (টোল ফ্রি-‘১৬৪৩০’) মাধ্যমে এ সেবা দেওয়া হয়। আর এ সময়ে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৫২ কোটি ৫১ লাখ ৬১ হাজার ৮১ টাকা আদায় করে বিচারপ্রার্থীদের দিয়েছে জেলা লিগ্যাল অফিসগুলো। শ্রমিকের পাওনা, ভরণপোষণ, খোরপোশসহ নানা খাতে এই টাকা আদায় করে বিচারপ্রার্থীদের দেন লিগ্যাল এইড কর্মকর্তারা। বর্তমানে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে যে পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে, তা তিন গুণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার আইন সংশোধন করে ৯টি আইনের বিরোধ প্রচলিত আদালতে মামলা দায়েরের আগেই মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করে বিধান জারি করে। মধ্যস্থতার মাধ্যমে কোনো মামলা নিষ্পত্তি হলে বাদী-বিবাদী পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি হবে। সেই চুক্তিনামা আদালতের ডিক্রির ন্যায় ব্যবহৃত হবে। আর মধ্যস্থতা সম্ভব না হলেই কেবল কোনো পক্ষ মামলা করতে আদালতে যেতে পারবেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে সারা দেশে ৪৫ লাখ মামলা বিচারাধীন। মামলাজট চরম আকার ধারণ করেছে। বিদ্যমান মামলার সঙ্গে প্রতিনিয়ত নতুন দায়েরকৃত মামলা যুক্ত হচ্ছে। মামলার সংখ্যানুপাতে বিচারকের সংখ্যা অপ্রতুল। এ অবস্থায় যেসব বিরোধ এবং অভিযোগ আপসযোগ্য অথবা বিবদমান পক্ষগণের সমঝোতায় দ্রুত এবং সহজে নিষ্পত্তি করা সম্ভব, সেসব বিরোধ বা অভিযোগ চিহ্নিতক্রমে মামলা দায়েরের আগেই মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা গেলে বিচারপ্রার্থীরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি এ খাতে রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয়ও হ্রাস পাবে।

আরও খবর

Sponsered content

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সংবাদ
4:18 PM ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু ভর্তি ৯৮৩ 4:01 PM জামালপুরে কাভার্ডভ্যান-ইজিবাইক সংর্ঘষে নিহত ৩, আহত ৭ 3:04 PM জাস্টিন ট্রুডো ও কেটি পেরির নতুন ভিডিও ভাইরাল 2:52 PM যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত ভারতের ৫০ তরুণ 2:37 PM মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের মান নির্ণয়ে হাইকোর্টে রিট 2:15 PM ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ৭৬১ 1:56 PM ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালন করবে 1:42 PM বিসিবির চাকরি ছাড়লেন ফিটনেস ট্রেনার নাথান কেলি 1:13 PM সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১ হাজার ৫১৫ 12:56 PM ডাকসু নেতাদের আচরণ নিয়ে ছাত্রদলের নাছিরের স্ট্যাটাস