প্রতিনিধি 11 October 2025 , 4:01:30 প্রিন্ট সংস্করণ

ভারত সফররত আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির নারী সাংবাদিকবর্জিত সংবাদ সম্মেলন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াংকা গান্ধী ভদ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্রসহ অনেকেই এ নিয়ে সরব। দেশের নারী সাংবাদিকেরাও সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন, কী করে সরকার নিজের দেশে নারী সাংবাদিকদের এই অসম্মান মেনে নিল। কেন তারা প্রতিবাদ পর্যন্ত করল না।
গতকাল শুক্রবারের ওই ঘটনার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আফগান সরকারের ওই বৈষম্যের নিন্দা করে একটিও বিবৃতি দেয়নি। আজ শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শুধু জানানো হয়, ওই সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা ছিল না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত খবরের দায়িত্বে থাকা সাংবাদিকেরা পাল্টা জানতে চান, ভূমিকা না থাকলেও তারা কি ওই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে? আফগান সরকারের নীতির নিন্দা করেছে? বৈষম্য যে করা হচ্ছে, তা কি তাদের জানা ছিল? এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়নি।
ভারত সফররত আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি গতকাল নয়াদিল্লির আফগান দূতাবাসে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। হায়দ্রাবাদ হাউসে মুত্তাকির সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর আফগান দূতাবাসে ওই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সেখানে বেছে বেছে পুরুষ সাংবাদিকদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনের খবর পেয়ে যেসব নারী সাংবাদিক দূতাবাসে পৌঁছেছিলেন, তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ওই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি। ঢুকতে না পারা নারী সাংবাদিকেরা সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানান।
দ্য হিন্দুর সুহাসিনী হায়দার এক্স বার্তায় সমালোচনা করে বলেন, ‘তাঁরা ভারত সরকারের অতিথি, অথচ এ দেশে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাঁদের জঘন্য বেআইনি নারীবৈষম্য নীতি প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হলো। তালেবান তাদের নারীবিদ্বেষ নীতি ভারতেও টেনে আনল। এটা বাস্তববাদিতা নয়, আত্মসমর্পণ।’

আরেক সাংবাদিক স্মিতা শর্মা বিস্ময় প্রকাশ করে এক্সে লেখেন, ‘মুত্তাকির সংবাদ সম্মেলনে কোনো নারী সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানানো হলো না। তালেবান জমানায় আফগান নারীদের দুর্দশার বিরুদ্ধে জয়শঙ্করের ভাষণ বা যৌথ বিবৃতিতে একটি শব্দও নেই। অথচ এ দেশে মুত্তাকিকে লালগালিচা বিছিয়ে স্বাগত জানানো হচ্ছে, যেখানে নারীদের সাফল্যে গর্ব বোধ করা হয়। এটাই আজকের রাজনীতি।’
আফগান সরকারের নীতির সমালোচনার পাশাপাশি সাংবাদিক বিজেতা সিং এক্সে পুরুষ সাংবাদিকদের একহাত নেন। তিনি লেখেন, ‘পুরুষ সাংবাদিকদের উচিত ছিল প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন বর্জন করা।’ সাংবাদিক গীতা মোহন লেখেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না।
ভারতের আমন্ত্রণে সফরে আসা আফগান মন্ত্রীর বৈষম্যমূলক নীতির প্রয়োগ বিরোধী রাজনীতিকদেরও প্রতিবাদী করে তোলে। আজ সকালেই সরব হন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াংকা গান্ধী ভদ্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে আজ সকালে প্রিয়াঙ্কা লেখেন, ‘ভারত সফররত আফগান মন্ত্রীর নারী সাংবাদিকবর্জিত সংবাদ সম্মেলেন নিয়ে আপনার অবস্থান স্পষ্ট করুন। আপনার নারী অধিকারের স্বীকৃতি সুবিধাজনকভাবে এক নির্বাচন থেকে আরেক নির্বাচন পর্যন্ত বিস্তৃত না হলে দেশের সবচেয়ে যোগ্য নারীদের এই অপমান কীভাবে ঘটতে দেওয়া হলো? নারীরা যে দেশের মেরুদণ্ড ও গর্ব?’
একই ধরনের প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র। তিনি এক্সে লেখেন, ‘সরকার দেশের প্রত্যেক নারীর সম্মানহানি ঘটিয়েছে। নারীবর্জিত সংবাদ সম্মেলনের অনুমতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে কেন্দ্র তার মেরুদণ্ডহীনতার পরিচয় রাখল।’
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরমও এ ঘটনায় বিস্মিত। এক্সে তিনি লেখেন, ‘ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি ও তার বাধ্যবাধকতা আমি বুঝি। আমি হতবাক হয়ে গেছি তাদের আদিম রীতিনীতির প্রতি আত্মসমর্পণ দেখে।’
চিদাম্বরম লেখেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এর প্রতিবাদে পুরুষ সাংবাদিকদেরও উচিত ছিল ওই সংবাদ সম্মেলন বর্জন করা। কারণ, তাঁরা উভয়েই একে অপরের সহকর্মী।’
কংগ্রেস মুখপাত্র শামা রহমান এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করকে ধিক্কার জানিয়ে লেখেন, ‘আমাদের আমন্ত্রণে আমাদের দেশে এসে তাদের মতো চলতে দেওয়ার জন্য মোদি–জয়শঙ্করের লজ্জিত হওয়া উচিত।’
মুত্তাকির এই সফর আনুষ্ঠানিক ও সরকারি হলেও হায়দরাবাদ হাউসের বৈঠকে ভারত ও আফগানিস্তান কোনো দেশের পতাকাই ছিল না। আফগান দূতাবাসে সংবাদ সম্মেলন শুরু করার আগে মুত্তাকি তাঁদের স্বীকৃত একটি ছোট পতাকা টেবিলের ওপর রেখেছিলেন।
তালেবান সরকারকে ভারত এখনো স্বীকৃতি দেয়নি। তবে কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস পুরোপুরি চালু করার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। ভারতে আফগান দূতাবাসেও এবার থেকে কূটনীতিকদের নিযুক্ত করা হবে বলে মুত্তাকি জানিয়েছেন।