নিজস্ব প্রতিবেদক 7 September 2025 , 7:22:52 প্রিন্ট সংস্করণ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমানকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে ঢাকার আদালতে আনা-নেওয়ার পথে অনৈতিক সুবিধা প্রদানের অভিযোগে কিশোরগঞ্জ পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও ১০ কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) এক অফিস আদেশে তাদের বরখাস্ত করা হয়। গণমাধ্যমকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী।
এ ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রধান কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ মাহমুদুল ইসলাম তালুকদার জানান, বরখাস্ত উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) হলেন মো. আবুল কাশেম।
কনস্টেবলরা হলেন- মনিরুজ্জামান, মো. কবির হোসেন, ইমরান, নির্জন খান, শামীম আলম, মো. রনি হোসেন, শরীফুল ইসলাম, তানভির রহমান, মো. আবু সাইদ মিয়া ও রবীন্দ্র দাস।
পুলিশের অফিস আদেশে বলা হয়, গত ১২ আগস্ট এনবিআরের সাবেক সদস্য ছাগলকাণ্ডের ঘটনায় দেশব্যাপী আলোচিত মতিউর রহমানকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে দুর্নীতির মামলা শুনানির জন্য নেওয়া হয়। আদালতে হাজিরা শেষে ফিরতি পথে পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত ‘স্কট’ দল কোনো স্থানে দুপুরে খাবার খাওয়ার জন্য যাত্রাবিরতি করে।
এ ঘটনায় গঠিত ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মতিউরকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে ঢাকায় আদালতে হাজির করা হয় এবং হাজিরা শেষে তাকে ফেরত আনার পথে যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা করা হয়। যাত্রাবিরতির সময় খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। স্কর্ট ইনচার্জের ব্যবস্থাপনায় হাজতিকে আলাদা কক্ষে বসিয়ে খাবার খাওয়ানো হয় এবং অন্য পুলিশ সদস্যরা বাইরে সাধারণ স্থানে খাবার গ্রহণ করেন। হাজতিকে আলাদা কক্ষে খাওয়ানো প্রচলিত স্কর্ট ডিউটির শৃঙ্খলার পরিপন্থি এবং ইনচার্জের দায়িত্ব পালনে শৈথিল্যের প্রমাণ মিলে। তবে তারা উপস্থিত থেকেও হাজতিকে আলাদা কক্ষে খাওয়ানোর অনিয়ম প্রতিরোধে উদ্যোগ নেননি; যা তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সার্বিকভাবে পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, হাজতিকে আলাদা কক্ষে খাওয়ানোর ঘটনা সত্য এবং এটি স্কর্ট ডিউটি শৃঙ্খলার পরিপন্থি।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই অফিসার ও ফোর্সের সদস্যরা উপরোক্ত কার্যকলাপ বিভাগীয় নিয়ম-শৃঙ্খলার পরিপন্থি, অসৎ উদ্দেশ্য, অসদাচরণ ও জনসম্মুখে পুলিশের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। তাদের পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল ১৯৪৩ এর প্রবিধান ৮৮০ মোতাবেক ০৬/০৯/২০২৫ খ্রি. তারিখ পূর্বাহ্নে ‘চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত’ করা হলো। সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালীন সময়ে তারা বিধি মোতাবেক বেতন ও ভাতাদি আহরণ করবে। তাছাড়া সাময়িক বরখাস্তকালীন পুলিশ লাইন্সে সার্বক্ষণিক হাজির থেকে সাদা পোশাকে নিয়মিত রোলকল দেবেন এবং পিটি, প্যারেডে হাজির থাকবেন।
জানা গেছে, গত বছরের কুরবানি ঈদের আগে ছেলের ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে আলোচনায় আসেন মতিউর রহমান দম্পতি। গণঅভ্যুত্থানের পর মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী আওয়ামী লীগ নেত্রী উপজেলা চেয়ারম্যানকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় গ্রেফতার করা হয়। তিনি বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে আছেন।