...
আন্তর্জাতিক

কিমের চীন সফর: কী নেই বুলেটপ্রুফ ট্রেনটিতে!

  প্রতিনিধি 2 September 2025 , 11:54:39 প্রিন্ট সংস্করণ

কিম জং–উন বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে ট্রেন থেকে জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলছেন।

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন গতকাল সোমবার রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে তাঁর চিরচেনা সবুজ রঙের ব্যক্তিগত ট্রেনে করে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের পথে রওনা হয়েছেন। ধীরগতির হলেও বিশেষভাবে নকশা করা ট্রেনটি উত্তর কোরিয়ার নেতারা কয়েক দশক ধরেই ব্যবহার করছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরিয়ার পুরোনো যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের তুলনায় এই বুলেটপ্রুফ ট্রেন অনেক বেশি নিরাপদ ও আরামদায়ক। এতে কিমের বিশাল সফরসঙ্গী, নিরাপত্তাকর্মী, খাবার ও অন্যান্য সুবিধার বন্দোবস্ত রয়েছে। পাশাপাশি আছে কোনো বৈঠকের আগে আলোচ্য বিষয় বা এজেন্ডা নিয়ে আলাপ–আলোচনার জায়গা।
২০১১ সালের শেষ দিকে উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্ব গ্রহণ করার পর কিম এ ট্রেনেই চীন, ভিয়েতনাম ও রাশিয়া সফর করেছেন।

ট্রেনের ভেতরে কী

অনেক বছর ধরেই উত্তর কোরিয়ার নেতারা ঠিক কতগুলো ট্রেন ব্যবহার করছেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে উত্তর কোরিয়ার পরিবহন বিষয়ে দক্ষিণ কোরীয় বিশেষজ্ঞ আন বিয়ং–মিনের মতে, নিরাপত্তার কারণে একাধিক ট্রেন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

আন বিয়ং–মিন জানান, প্রতিটি ট্রেনে ১০ থেকে ১৫টি কামরা থাকে। কিছু কামরা শুধু নেতার জন্য, যেমন শয়নকক্ষ। অন্য কামরাগুলোতে থাকেন নিরাপত্তাকর্মী ও চিকিৎসাকর্মীরা।

‘সাধারণত ট্রেনে কিমের কার্যালয়, যোগাযোগের সরঞ্জাম, রেস্তোরাঁ ও দুটো সাঁজোয়া মার্সিডিজ গাড়ি রাখার কামরাও থাকে’, বলেন বিয়ং–মিন।

আজ মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, কিম জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি সবুজ কামরার পাশে সিগারেট খাচ্ছেন। কামরাটির গায়ে সোনালি নকশা ও প্রতীক আঁকা। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, কাঠের প্যানেল দেওয়া একটি কক্ষে বসে আছেন কিম। পেছনে সোনালি প্রতীক ও পাশে উত্তর কোরিয়ার পতাকা।

কিমের টেবিলে রাখা ছিল সোনালি অক্ষরে খোদাই করা ল্যাপটপ, কয়েকটি টেলিফোন, সিগারেটের বাক্স এবং নীল ও স্বচ্ছ তরলভর্তি বোতল। জানালায় ছিল নীল–সোনালি রঙের পর্দা।

২০১৮ সালে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রচার করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, প্রশস্ত এক কামরায় গোলাপি সোফার সারির মধ্যে বসে চীনা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন কিম।

২০২০ সালে টাইফুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার সময় টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায়, ট্রেনের এক কামরায় ফুল আকৃতির আলো আর জেব্রা প্রিন্ট দেওয়া কাপড়ের চেয়ার।

রুশ কর্মকর্তা কনস্টান্টিন পুলিকোভস্কি তাঁর ২০০২ সালের বই ‘অরিয়েন্ট এক্সপ্রেস’–এ কিম জং–ইল (কিম জং–উনের বাবা ও সাবেক উত্তর কোরীয় নেতা) ট্রেনে করে মস্কো যাওয়ার তিন সপ্তাহের যাত্রার চিত্র তুলে ধরেন। তাতে লেখা রয়েছে, সফরে কিম ইল ফ্রান্সের প্যারিস থেকে আনা ওয়াইন ও জীবন্ত লবস্টার পরিবেশন করেছিলেন ট্রেনটিতে।

সীমান্ত অতিক্রম করে কীভাবে

দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষজ্ঞ আন জানান, ২০২৩ সালে রাশিয়া সফরে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের সময় কিমের ট্রেনকে সীমান্ত স্টেশনে চাকা বদলাতে হয়েছিল। কারণ, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার রেললাইনের মাপ এক নয়।

চীনের ক্ষেত্রে এমন দরকার হয় না। তবে সীমান্ত পার হওয়ার পর স্থানীয় রেলব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ও সংকেত বোঝার সুবিধার্থে ট্রেন টেনে নেয় চীনের লোকোমোটিভ (ট্রেনের ইঞ্জিন)। এ তথ্য দেন দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক রেল প্রকৌশলী কিম হান–তায়ে। তিনি উত্তর কোরিয়ার রেলপথ নিয়ে বই লিখেছেন।

সাম্প্রতিকতম এ সফরের আগে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন কিম। ওই সফরে চীনের তৈরি সবুজ রঙের ডিএফ১১জেড লোকোমোটিভ কিমের ট্রেনের বিশেষ কামরাগুলো টেনে নেয়। রাষ্ট্রীয় চায়না রেলওয়ে করপোরেশনের প্রতীক আঁকা ছিল এ ইঞ্জিনে। গণমাধ্যমের ছবিতে দেখা গেছে, অন্তত তিনটি ভিন্ন সিরিয়াল নম্বরযুক্ত ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে।

আনের মতে, এসব নম্বর সাধারণত ০০০১ বা ০০০২ হয়, যা ইঙ্গিত দেয়—চীন তাঁকে এমন ইঞ্জিন দিচ্ছে, যা শুধু শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত।

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভিয়েতনামে বৈঠক করতে চীনের ভেতর দিয়ে যাত্রার সময় কিমের ট্রেন টেনে নেয় লাল–হলুদ রঙের এক লোকোমোটিভ, যাতে চীনের জাতীয় রেলওয়ের প্রতীক আঁকা ছিল।

আন বলেন, চীনের রেলপথে এ ট্রেন ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) গতিতে চলতে পারে। তবে উত্তর কোরিয়ার রেলপথে এর গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ প্রায় ৪৫ কিলোমিটার (২৮ মাইল)।

কারা ব্যবহার করেছেন এই ট্রেন

উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা নেতা কিম ইল–সুং (কিম জং–উনের দাদা) ১৯৯৪ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত নিয়মিত ট্রেনে করে বিদেশ সফর করতেন।

কথিত আছে, উড়োজাহাজে উঠতে ভয় পেতেন বলেই ট্রেনে ভ্রমণ করতেন কিম জং–উনের বাবা কিম জং–ইল। তিনবার রাশিয়া সফরে শুধু ট্রেনই ব্যবহার করেছেন তিনি। এর মধ্যে ২০০১ সালে তিনি ২০ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করে মস্কো যান।

২০১১ সালের শেষদিকে এক ট্রেনযাত্রার সময় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কিম জং–ইল। তাঁর ব্যবহৃত সেই কামরা এখনো তাঁর সমাধিক্ষেত্র প্রদর্শিত হচ্ছে।

দীর্ঘ ট্রেনযাত্রাকে দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কিম পরিবারের দেখা–সাক্ষাৎ করার মাধ্যম বা প্রতীক হিসেবে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রচারণায় ব্যবহার করা হয়।

২০২২ সালে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন কিম জং–উনের এক সফরকে আখ্যা দিয়েছিল ‘দেশজুড়ে কষ্টসাধ্য ট্রেন ভ্রমণ’। ওই সফরে তিনি ভুট্টাক্ষেত ঘুরে দেখেন এবং ‘কমিউনিস্ট স্বপ্নরাজ্য’ গড়ে তোলার প্রচারণা চালান।

আরও খবর

Sponsered content

সর্বশেষ সংবাদ
5:00 PM নির্বাচনে নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের জন্য ঐতিহাসিক পরীক্ষা: আইজিপি 4:57 PM দুবাইয়ে আবেদনময়ী লুকে মিষ্টি জান্নাত 4:34 PM আমানত বৃদ্ধি ও ঋণ বিতরণে উপশাখার প্রবৃদ্ধি: কেন্দ্রীয় ব্যাংক 4:08 PM কোনো ব্যাংক লোকসানে থাকলে, বোনাস পাবে না কর্মকর্তারা: গভর্নর 4:08 PM ইউক্রেনের মন্ত্রিসভা ভবনে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রাশিয়ার 4:03 PM ভোটের পরিবেশ শতভাগ অনুকূলে: ইসি আনোয়ারুল 4:00 PM বদরুদ্দীন উমর ছিলেন মুক্তবুদ্ধি-প্রগতি সংগ্রামের উজ্জ্বল বাতিঘর: প্রধান উপদেষ্টা 3:54 PM টাঙ্গাইলে কাদের সিদ্দিকীর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর 3:50 PM বাণিজ্যচুক্তিভুক্ত দেশগুলোকে কিছু শুল্ক ছাড় দিয়ে ট্রাম্পের নতুন আদেশ 3:46 PM এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান তাসকিন
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.