প্রতিনিধি 16 August 2025 , 12:45:21 প্রিন্ট সংস্করণ
বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু হয়েছে। দেশের ইতিহাসে এ প্রথম সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর এ উদ্যোগের ফলে খরচ সাশ্রয় ছাড়াও অল্প সময়ে নিরাপদে তেল পরিবহন সম্ভব হবে।
শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় পদ্মা ওয়েল কোম্পানির ডেসপাস টার্মিনালে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তথ্য অনুযায়ী, এত দিন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় তেল পরিবহণে বছরে প্রায় ৩২৬ কোটি টাকা খরচ হতো। পাইপলাইনে সেই খরচ নেমে আসবে মাত্র ৯০ কোটি টাকায়। এতে বছরে অন্তত ২২৬ কোটি টাকা সরাসরি সাশ্রয় হবে। সিস্টেম লস ও চুরি ঠেকাতে পারলে সাশ্রয়ের পরিমাণ আরও বেড়ে বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিশ্ববাজারে কমেছে আকরিক লোহার দাম
বিপিসির বাস্তবায়ন ও সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের নির্মাণে ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন চট্টগ্রাম থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। এতে ২২টি নদী-খাল অতিক্রম করা হয়েছে এবং নির্মিত হয়েছে নয়টি আধুনিক স্টেশন ও ডিপো।
উদ্বোধনের পর থেকে তিনটি বিপণন কোম্পানি এ পাইপলাইন ব্যবহার করে জ্বালানি সরবরাহ করবে। চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লার বরুড়ায় স্থাপিত সর্বাধুনিক অটোমেটেড ডিপো হয়ে তেল পৌঁছাবে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ঢাকার ফতুল্লায়। বরুড়ার ডিপো থেকেই চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশপাশের জেলায় সরবরাহ করা হবে প্রয়োজনীয় জ্বালানি। পুরো প্রক্রিয়াই থাকবে কম্পিউটারাইজড নিয়ন্ত্রণে।
পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫০ মেট্রিকটন এবং বছরে সর্বোচ্চ ৫ মিলিয়ন মেট্রিকটন তেল পরিবহন সম্ভব হবে। আগে নৌপথে ট্যাংকারে তেল নিতে যেখানে সময় লাগত ৪৮ ঘণ্টা, এখন পাইপলাইনে সময় লাগবে মাত্র ১২ ঘণ্টা। পতেঙ্গায় খোলা হয়েছে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, যেখান থেকে ২৪ ঘণ্টা পরিবহন ও নিরাপত্তা তদারকি করা হবে।
আরও পড়ুন: স্টিল-অ্যালুমিনিয়াম পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ
প্রকল্প পরিচালক মো. আমিনুল হক বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে ইতোমধ্যে পাঁচ কোটি লিটার ডিজেল কোনো ক্ষতি ছাড়াই সরবরাহ করা হয়েছে। এখন দ্রুত ও নিরাপদে দেশের বিভিন্ন স্থানে তেল পৌঁছানো সম্ভব হবে।’
২০১৮ সালে অনুমোদিত প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ছিল ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। করোনাজনিত বিলম্ব ও অতিরিক্ত কাজের কারণে শেষ পর্যন্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।